হার্টের রোগে ব্যবহার করুন অর্জুন গাছের ছাল বা বাকল | অর্জুন গাছের ছাল বা বাকল যেভাবে ব্যবহার করবেন
অর্জুন গাছের ঔষধি গুণের অন্ত নেই। হৃদরোগের মহৌষধ অর্জুন গাছ। অর্জুন গাছের ছাল বা বাকল ব্যবহারের মাধ্যমে হার্টের রোগীরা হৃদরোগে উপশমে পেয়ে থাকেন।
আজকের পোস্টে অর্জুন গাছের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং হৃদরোগে অর্জুন গাছের ছাল বা বাকল ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
অর্জুন গাছের বাংলা নামঃ অর্জুন, কাহু (চাকমা)।
ইংরেজি নাম: Arjuna, Arjuna Myrobalan.
বৈজ্ঞানিক নাম: Terminalia arjuna (Roxb) W.& A
পরিবার: Combretaceae
ইউনানি নাম: লেসানুল ইনসান
আয়ুর্বেদিক নাম: অর্জুন
ব্যবহার্য অংশ: প্রধানত ছাল তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে পাতা ও ফল ব্যবহৃত হয়।
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে। বর্তমানে মূল ও কাণ্ড কাটিং এর মাধ্যমেও চারা তৈরি করা হচ্ছে।
পরিচিতিঃ
অর্জুন গাছ চিরসবুজ বৃক্ষ প্রজাতির গাছ। কাণ্ড লম্বা ও শাখা-প্রশাখাযুক্ত। অর্জুন গাছ লম্বায় প্রায় ৫০-৮০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছের বাকল ধূসর রঙের, পুরু ও মসৃণ। পাতা সরল, আয়তকার, সবুজ রঙের, দেখতে অনেকটা পেয়ারা পাতার মত। পাতা লম্বায় প্রায় ৮-১১ সে.মি. এবং চওড়া ৪-৬ সে.মি, হয়। পাতার বোটা খুব ছোট এবং গোড়ায় ২টি অর্বুদ বা টিউমারের ন্যায় আছে। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তের আগমনে গাছে নতুন পাতা গজায়। ফুল খুব ছোট এবং মঞ্জরিদণ্ডের চারিদিকে সজ্জিত থাকে। রঙ সাদা বা হালকা হলুদ। মঞ্জুরিদণ্ডের উপরের ফুলগুলো সাধারণত পুরুষ ফুল হয়ে থাকে। ফুলের বৃতি টিউব (নল) এর মত এবং ত্রিকোনাকার ৪-৫টি খাঁজ থাকে। ফুলে ১০টি পুংকেশর মুক্ত অবস্থায় থাকে এবং পুংদণ্ড লম্বা। বাদামি বা লালচে রঙের এক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট একটি ডিম্বাশয় থাকে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে ফুল ফুটে এবং শীতকালে ফল ধরে। ফল দেখতে কামরাঙার মত কিন্তু আকৃতিতে কামরাঙার চেয়ে ছোট। গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। ফল শক্ত। উপরের অংশে বা ত্বকে ৫-৭টি খাজ আছে। লম্বায় প্রায় ২ সে.মি. হয়।
হৃদরোগের মহৌষধ অর্জুন গাছ:
বর্তমানে হার্টের রোগ বিপুল পরিমানে বেড়ে চলেছে। আগেকার দিনে চিকিৎসকরা একটি কথা বলতেন, তা হলো-“হার্টের রোগ হলো ধনীদের রোগ, গরীবদের এ রোগ বেশি হয় না। মধ্যবিত্তের সামান্য কিছু হয়”।
কিন্তু বর্তমানে এ কথা মোটেও খাটে না। ধনী দরিদ্র সবার একটি অতি সাধারন রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হার্টের রোগ। বর্তমানে এ রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারন: ৫০ বছর পার হলেই প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৭-৮ জন লোক বলেন, যে তাঁরা হার্টের রোগে ভূগছেন এবং হার্ট পরীক্ষার জন্য তাঁদের যেতে হয় কার্ডিওলজিষ্টদের কাছে।
আরও একটি প্রধান কথা হলো প্রতি ৫জনের মধ্যে আক্রান্ত হন একজন নারী। মাত্র ১৫/২০ বছর আগেও এই রোগ ছিল ১৫জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১জন নারী, কিন্তু ধীরে ধীরে নারীদের হার্টের রোগ বেড়ে এই অবস্থায় এসে ঠেকেছে।
আমরা জানি, হার্ট হলো দেহের সমস্ত রক্তকে পাম্প করে সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়া এবং অশুদ্ধ রক্তকে গ্রহন করে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেবার যন্ত্র। এটি ৪টি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। এ হার্টকে আবার রক্ত সরবরাহ করে ধমনী ও শিরা।
অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগে। অর্জুন ছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ। এ কো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্ট এ্যাটাক (Heart attacks) প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড প্রেসার (Blood pressure) এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়। অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃদপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে।
বাকলের ঘন রস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। বাকলের রস না থাকলে শুকনো বাকলের গুড়া ১-২ গ্রাম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মি.লি. দুধ ও ৫০০ মি.লি. পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মি.লি. থাকতে ছেঁকে বিকেলে খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে। তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো-ব্লাড প্রেসারে উপযুক্ত নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য প্রেসার বাড়বে।
সূত্র: বাংলাদেশ কৃষি বাতায়ন
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোন ভেষজ ঔষধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
--------------------------------
আরও দেখুন
দাদ-এর চিকিৎসায় দারুচিনি যেভাবে ব্যবহার হয়
----------------------------------
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments