কালিজিরার চাষ পদ্ধতি | কালিজিরার উপকারিতা | কালিজিরা কেন খাবেন?
কালোজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালোজিরা খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়। মসলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হলেও ইউনানি মতে নারীদের বিভিন্ন রোগে ও সমস্যায় কালিজিরা অব্যর্থ মহৌষধ।
কালোজিরার উৎপাদন কৌশল:
শুকনা ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া কালিজিরা আবাদে খুব অনুকূল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আবহাওয়া বালাইয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি হলে কালিজিরার ফলন কমে যায়। ৩ থেকে ৪টি চাষ ও আড়াআড়ি মই দিয়ে মাটি ঝুরাঝুরা করে আগাছা পরিষ্কার করে জমি সমতল করে বীজ বপন করতে হয়। অল্প পরিমাণ এক বিঘা বা তার কম জমিতে চাষ করলে ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি উঁচু বেড তৈরি করা ভালো।
বপন:
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহ
বীজ বপন করার উত্তম সময়। অগ্রহায়ণের শেষ থেকেই লাগানো যায়। বৃষ্টির সম্ভাবনা
থাকলে পৌষের প্রথমে লাগানো ভালো। সফলভাবে কালোজিরা উৎপাদনের জন্য ১৫x১০
সেন্টিমিটার দূরত্বে লাইনে বীজ বপন করলে ভালো হয়। ১-৪ ইঞ্চি গর্ত করে প্রতি গর্তে
২-৩টি করে বীজ পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেন বেশি গভীরে না যায়। বীজ বপনের
আগে আলাদা করে শোধনের দরকার নেই। তবে বোনার আগে ভালো করে ধুয়ে ধুলাবালি ও চিটা বীজ
সরিয়ে নেয়া ভালো। ভেজা বীজ বপন করা উচিত না। হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৬ কেজি বীজের
প্রয়োজন হয়।
সার প্রয়োগ:
জমি তৈরি ও শেষ চাষের সময় প্রতি হেক্টরে পচা গোবর ৫ থেকে ১০ মেট্রিক টন, ইউরিয়া ৬৫
কেজি, টিএসপি ৯৫ থেকে ১০০ কেজি, এমওপি ৭৫ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে
হবে। বীজ বপনের ৪০ দিন পর বাকি ইউরিয়া ৬৫কেজি উপরিপ্রয়োগ হিসেবে জমিতে মিশিয়ে দিতে
হবে। কেউ কেউ ভালো ফলনের জন্য খৈল ব্যবহার করেন।
পরিচর্যা: বীজ লাগানোর পরই হালকা করে মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দিতে হবে। পাখিতে বীজ খেতে না পারে, সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন হলে আগাছা পরিষ্কার, গাছ পাতলাকরণ কাজগুলো নিয়মিত ও পরিমিতভাবে করতে হবে।
সেচ ও নিকাশ: সাধারণত সেচের প্রয়োজন নেই। জমিতে রস না থাকলে বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে প্লাবন সেচ দিলে বীজ এক জায়গায় জমা হয়ে যেতে পারে। মাটির ধরন আর বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে পুরো জীবনকালে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। কোনো কারণে জমিতে পানি জমলে দ্রুত নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা: কালোজিরা সহজে তেমন কোনো পোকামাকড়ে আক্রান্ত করে না। বরং এর স্বাভাবিক পোকামাকড় ধ্বংসের ক্ষমতা আছে। সে রকম রোগবালাইও তেমন হয় না। মাঝে মাঝে কিছু ছত্রাক আক্রমণ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২-৩ বার ১০ দিন পরপর ছিটিয়ে দিতে হবে।
জীবনকাল: বীজ বপনের পর সর্বমোট ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনে গাছ হলদে বর্ণ ধারণ করে মরে যায়। ১৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে ফসল পাকবে ও তোলার সময় হবে অর্থাৎ পৌষের প্রথমে চাষ করলে চৈত্রে ফসল তোলা যাবে।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন: ১ বিঘা জমিতে চাষ করলে গড়ে ৯০ থেকে ১১০ কেজি কালোজিরা পাওয়া যাবে। একরপ্রতি ৩০০ কেজি থেকে ৩৩০-৩৪০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বারি কালোজিরা-১ সঠিক পরিচর্যায় হেক্টরপ্রতি ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দেয়। ফাল্গুন-চৈত্রে গাছ মরে গেলে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে ২ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাতে সাবধানে আঘাত করে মাড়াই করে বা লাঠি দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায়। গাছে সামান্য রস থাকতেই ফল সংগ্রহ করা উচিত, তা নাহলে বীজ জমিতে ঝরে পড়তে পারে। বীজ রোদে শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে কুলা দিয়ে পরিষ্কার করে চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে অন্তত এক বছর পর্যন্ত বীজ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়। মানসম্মত বীজ সংরক্ষণে পাত্র শুকনো, ঠাণ্ডা, অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে।
কালিজিরার উপকারিতা:
হাদিসে বর্ণিত কালিজিরার বহুবিধ উপকারিতা, কালিজিরা কেন খাবেন? গাছ-গাছড়ার চিকিৎসা। আমরা জানি জিরা দুই রকম, যেমন- জিরা এবং কালিজিরা। এদেরকে আমাদের রান্না ঘরে দেখা গেলেও ঔষধ হিসেবেও এরা কম ব্যবহার হয় না। শুনেছি কালিজিরা নাকি আমাদের দেশে হতো না। তবে কবে, কখন যে আমাদের দেশে এ গুলো জন্মাতে শুরু করেছে, তাও নাকি সঠিক করে জানা যায় নি।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স:) এক কথায় কালিজিরার উপকারিতার কথা বলে গেছেন, যারপর কালিজিরার উপকারিতার কথা আর বলার থাকে না। আর তা হলো- “কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ”। আর কালিজিরা ক্ষুধা বাড়ায়। পেটের বায়ু/গ্যাস দূর করে আর প্রস্রাব বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া পেট ও ফুসফুসের রোগে ভালো কাজ করে। অর্শ রোগেও এটি ব্যবহার করা হয়। তবে এই কালিজিরা গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধ বাড়াতেও সাহায্য করে বলে জানা গেছে।
তা হলে জানা যেতে পারে আর কী কী রোগে কালিজিরা উপকারে লাগে:
অনিয়মিত মাসিক: অনেক মেয়েরই মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে। কখনো আগে, কখনো-বা পরে হয়। কেউ আবার মাসিকে অল্প রক্ত বা বেশি রক্ত যাবার কারণে কষ্ট পান। এই ক্ষেত্রে কালিজিরার চিকিৎসা ভালো ফল দিতে পারে। মাসিক হওয়ার ৫/৭ দিন আগে থেকেকালিজিরার তৈরি ঔষধ খেতে হবে। প্রথমে ৫০০ মিলিগ্রাম কালিজিরা নিয়ে হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সকালে আর বিকালে দু'বার খেতে হবে। আশা করা যায়, এতে মাসিকের সমস্যা কমে যাবে। যদি এতে কাজ না হয়, তবে দুই-তিন মাস এই ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে।
মায়ের স্তনে দুধ বাড়াতে: মায়ের বুকে দুধ কম থাকলে কালিজিরা খেলে দুধ আসে। প্রথমে ৫০০ মিলিগ্রাম কালিজিরা একটু ভেজে নিয়ে গুড়া করতে হবে। এই কালিজিরা গুড়া ৭/৮ চা-চামচ দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দু'বার খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রসব পরবর্তীকালে কালিজিরা ভর্তা খেলে জরায়ু স্বাভাবিক হয়ে যায়।
চুলকানি: শরীরে চুলকানি হলে কালিজিরা ভাজা তেল গায়ে মাখলে চুলকানির উপশম হয়। ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে ২৫/৩০ গ্রাম কালিজিরা ভেজে সেই তেল ছেঁকে নিয়ে গায়ে ব্যবহার করলে চুলকানি সেরে যায়।
বিছার হুলের জ্বালা-পোড়া: বিছা গায়ে হুল ফোটালে খুব জ্বালা-পোড়া হয়। এই জ্বালা-পোড়া থেকে মুক্তি পেতে কালিজিরা বেটে হুল ফোটানো জায়গায় লাগিয়ে দিতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা-পোড়া কমে যাবে।
সর্দির কারণে মাথার যন্ত্রণা: কাঁচা শ্লেস্মায় খুব মাথা ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে কালিজিরা এক টুকরো কাপড়ের পুটুলিতে নিয়ে নাক দিয়ে শুকতে হবে। মাঝে মাঝে পুটুলিকে একটু নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। কালিজিরার গন্ধে মাথার যন্ত্রণা কমে যাবে।
--------------------------------
আরও দেখুন
----------------------------------
সূত্র: লতাপাতার ঔষধি গুণ
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বাতায়ন
ছবি: সংগৃহীত
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোন ভেষজ ঔষধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments