জিরার চাষ পদ্ধতি | জিরার ঔষধিগুণাবলি | Cultivation of Cumin
রান্নায় জিরার চাহিদা খুব বেশি। জিরা আমাদের দেশের মসলা নয়, এদেশে জন্মতও না। এদেশে অতিথি হয়ে এসেছিল সে। এখন এদেশের বাসিন্দা হয়ে গেছে জিরা। জিরা একটি দরকারি মসলা। প্রতিদিনের রান্নায় জিরা ছাড়া একটুও চলে না। তরিতরকারিতে ভাজা জিরার মন ভোলানো গন্ধ সবার ভালো লাগে। মসলা হিসেবে জিরা দারুণ মজাদার।
জিরার আদিবাস মিশর দেশে। জিরা ভারতের উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবে বেশি জন্মে থাকে। মসলার চাহিদা অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারতে জিরার আছে বিশাল বাজার। জিরার গাছ ছোট ঝোপ জাতীয়। গাছ থেকে বহু ছোট ছোট ডালপালা শাখা-প্রশাখা বের হয়। এ গাছ লম্বায় ২/৩ ফুট হয়। পাতাগুলো লম্বা শনের মতো। ফুল হয় সাদা সাদা। সাধারণত শীতে ফুল ফোটে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ফল ধরে। আজকাল বাংলাদেশেও জিরার চাষ হয়। জিরা মসলা হলেও এর আছে নানা ঔষধি গুণ, তাই আমাদের অনেক অসুখ-বিসুখে জিরা কাজে লাগে।
নাতিশীতোষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়া জিরা চাষের জন্যে প্রয়োজন বিধায় বাংলাদেশে শীতকালে জিরা চাষ সম্ভব। সঠিক পরিচর্যায় সহজেই হেক্টরপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি জিরার ফলন পাওয়া সম্ভব।সুনিষ্কাশিত উর্বর,গভীর এবং বেলে দোঁআশ মাটি জিরা চাষের জন্যে উত্তম।
বীজের হার ও বপন: প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ কেজি বীজ লাগে ছিটিয়ে বীজ বপন করতে। তবে সারিতে মাদা করে লাগালে প্রতি হেক্টরে ৮-১০ কেজি বীজ লাগে। সারিতে বপন করলে দুরত্ব হবে ২৫× ১৫ সেমিঃ। জিরা বোনার আগে ২/৩ দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের সাথে ২ গ্রাম হারে ভিটাভেক্স মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। অক্টোবর,নভেম্বর মাস বীজ বোনার উত্তম সময়।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ: ৫-৮ টি লাঙ্গল এবং মই দিয়ে জমি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। হেক্টর প্রতি ৫ টন জৈব সার, এবং শেষ চাষের আগে ২০ কেজি ইউরিয়া, ৮০-১০০ কেজি টিএসপি ও ৭০-৭৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর বীজ বোনার ৩০ দিন পর একবার এবং ৬০ দিন পর আরেকবার ২০ কেজি করে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রত্যেকবার সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে।
পরিচর্যা: বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পর
আগাছা এবং অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে এবং চারার গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ জো না থাকলে বীজ বোনার পরে হালকা সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময়ে
এবং জিরা পুষ্ট হওয়ার সময়ে যেন মাটি শুকনা না থাকে, তা লক্ষ রাখতে হবে।
ফসল তোলা এবং সময়: ৯০-১১০ দিনের মধ্যে জিরা তোলা যায়। ফসল পেকে গেলে ছোট ছোট আঁটি বেঁধে,খামারে এনে তারপর রোদে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ জিরা আলাদা করতে হয়। ভালভাবে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ কেজি ফলন পাওয়া সম্ভব।
জিরা মসলার উপকারসমূহ:
পেটের অসুখ (পিত্তদোষ): পেটের অসুখ নানা ধরনের হয়ে থাকে। যখন পেটের অসুখ পিত্তদোষে হয়, তার লক্ষণ হলো ক্ষুধা না লাগা। আমাশয় জড়ানো পাতলা পায়খানা হওয়া। প্রস্রাব কমে যাওয়া ও পানি খেতে ইচ্ছা না করা। এ রকম হলে ৪০০ মিলিগ্রাম মতো ভাজা জিরার গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে প্রতিদিন একবার করে খান। এতে উপকার পাবেন। এছাড়াও যদি আমরুল শাকের রস ১ চামচ ভাজা জিরা গুড়ার সাথে মিশিয়ে খান, তবে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে। এভাবে ৩/৪ দিন খেতে হবে। যাদের পিত্তদোষ আছে, তাদের গুরুপাক খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
অর্শ রোগ: যেসব অর্শরোগে পাতলা পায়খানা হয়, কিন্তু ভালো মতো হয় না, মলদ্বারে যন্ত্রণা হয়, তাদের জন্য জিরার পানি উপকারী। এক বা দুই গ্রাম জিরা। একটু থেঁতো করে দুই কাপ পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি শুকিয়ে আধা কাপ হলে নামিয়ে রাখুন। এবার ঐ পানি ছেকে নিয়ে প্রতিদিন একবার করে খান। ২/৩ দিন। পরে যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, তবে মাত্রা কমাতে হবে। এছাড়া ১ কাপ গরম পানিতে ১০/১২ ঘণ্টা ১ বা ২ গ্রাম জিরা ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি খেলেও উপকার পাবেন।
কৃমির সমস্যা: অনেকের কৃমির সমস্যা সারা বছরই থাকে। ছোট কৃমির যন্ত্রণায় যারা অস্থির, তাদের জন্য জিরার পানি উপকারী। ৩/৪ গ্রাম জিরা একটু থেঁতো করে, ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি শুকিয়ে আধা কাপ হলে তা ছেঁকে নিন। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে একবার করে খেতে থাকুন। সপ্তাহ খানেক পরে দেখবেন অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
স্বরভঙ্গ: অনেকের ঠাণ্ডায়, হৃদরোগে, শ্বাস কষ্টের শুরুতে গলা ভেঙে যায়। আবার যাদের বারো মাস আমাশয় থাকে, তাদের গলার আওয়াজটা ভাঙা ভাঙা হয়। এ রকম অবস্থা হলে, ঘোলের সাথে জিরা খেলে অনেকটা উপশম হয়। বাড়িতে পাতা দই ঘোল করে নিন। এর সাথে ৪/৫ গ্রাম জিরার গুঁড়া মিশিয়ে ভাতের সাথে খান। গলা ভাঙা সেরে যাবে। যাদের হাঁপানি আছে, তাদের এই চিকিৎসা চলবে না।
মেদ কমাতে: মেদ কমানোরর জন্য এক চা চামচ জিরার গুঁড়া সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার খেলে উপকার পাওয়া যায়। এভাবে ১ মাস খেলে মেদ জমতে পারবে না।
--------------------------------
আরও দেখুন
লজ্জাবতী গাছের পরিচিতি ও গুণাবলি
----------------------------------
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি সংগৃহীত
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোন ভেষজ ঔষধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments